1. news@www.voiceofnews.net : উৎসবের আলো : উৎসবের আলো
  2. info@www.voiceofnews.net : দৈনিক উৎসবের আলো : দৈনিক উৎসবের আলো দৈনিক উৎসবের আলো
  3. info@www.voiceofnews.net : voiceofnews.net :
বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন

১৪০ দিনের যুদ্ধ শেষ হলো আরাফাতের

ভয়েস অব নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ২৭ বার পড়া হয়েছে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের খবরে রাজধানীজুড়ে বিজয় মিছিল বের হয়। এই মিছিলে অংশ নেওয়ার আনন্দ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চায়নি মাদ্রাসাছাত্র আরাফাত হুসাইন (১২)। তাই সেদিন বিকেলে সে অন্য সহপাঠীর সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে।

তবে মিছিলটি উত্তরার আজমপুর পূর্ব থানার সামনে যেতেই গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি গুলি আরাফাতের পেটের বাঁ পাশ দিয়ে ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। এর পর থেকে আরাফাতকে নিয়ে শুরু হয় দরিদ্র মা-বাবার যুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি। সাড়ে চার মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর গত রোববার রাতে সে মারা গেছে।

উত্তরার জামিয়া রওজাতুল উলুম মাদ্রাসার ইবতেদায়ি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত। শহীদুল ইসলাম ও সালেহা আক্তার দম্পতির তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়। উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের পাকুরিয়া এলাকায় ছোট্ট একটি বাসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন রিকশাচালক শহীদুল। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায়।

স্বজনরা জানিয়েছেন, ছেলেকে বাঁচাতে শহীদুল অনেক কষ্ট করেছেন। দিনে রিকশা চালিয়ে রাতে  হাসপাতালে আরাফাতের কাছে থাকতেন। ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে মা সালেহার চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে। না খেয়ে, না ঘুমিয়ে দিনের পর দিন হাসপাতালে কাটিয়েছেন তারা। অবশেষে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ছেলেটির মৃত্যু হয়।

এদিকে আরাফাত আহত হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা পায়নি উল্লেখ করে গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গতকাল বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথম জানাজা শেষে আরাফাতের মরদেহ নেওয়া হয় উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টর আহলিয়া খেলার মাঠে। সেখানে বাদ মাগরিব আরেক দফা জানাজা শেষে পাশের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আরাফাতকে দাফনের পর কবরস্থানের পাশে বসে ছিলেন মা সালেহা আক্তার। এ সময় তিনি আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘এতদিন তো কত লোক বলছিল, বিদেশে নিলে আমার ছেলে সুস্থ হয়ে যাবে। কই, সরকারের কেউ তো বিদেশ নেওয়ার ব্যবস্থা করল না! তার ভিসা দিল না। আমার ছেলের আর ভিসা লাগবে না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটির সচিব তারেকুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে আরাফাতের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু এক মাস ধরে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এর আগেও তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ) হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ২৪ ডিসেম্বর (আজ) দেশের বাইরে নিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর আগেই সে চলে গেল।

শহীদ মিনারে জানাজায় ইমামতি করেন আরাফাতের বড় ভাই হাসান আলী। এতে আরাফাতের বাবা শহীদুল ইসলাম, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েমসহ অনেকে অংশ নেন।

শহীদ মিনারে শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলের বাঁ পাজর দিয়ে গুলি ঢুকে মেরুদণ্ড ভেঙে ডান দিক দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। এতে তার একটি কিডনি, নাড়ি ও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উদ্ধার করে তাকে প্রথমে নেওয়া হয় উত্তরার একটি হাসপাতালে। সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিএমএইচে পাঠানো হয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ছেলের ঝাল জাতীয় খাবার খুব পছন্দ। হাসপাতালের বেডে শুয়ে মাংস-রুটি খেতে চাইত। বলত, মরেই তো যাব, তাহলে খেয়েই মরি! কিন্তু খেলেই ওর পেট ফুলে যেত। এ জন্য আমরা খাবার দিতাম না। তার বাঁচার প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল। বলত, হুইলচেয়ারে চলতে হলেও আমি বাঁচতে চাই। শেষ পর্যন্ত ছেলেটাকে বাঁচানো গেল না।

জানাজার আগে সারজিস আলম বলেন, শহীদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমরা যেন আমাদের ভাইদের স্বপ্ন কোনোভাবেই ভুলে না যাই।

উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, গণহত্যাকারীদের বাংলার মাটিতে বিচার নিশ্চিত করব– এ ঘোষণা দিয়েই আমরা এক দফা ঘোষণা করেছিলাম। আমরা একবিন্দুও পিছপা হইনি। বিচার নিশ্চিত করবই।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রতিটি গুলির বিচার হবে। এ সরকার শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পুনর্বাসন করবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট