1. news@www.voiceofnews.net : উৎসবের আলো : উৎসবের আলো
  2. info@www.voiceofnews.net : দৈনিক উৎসবের আলো : দৈনিক উৎসবের আলো দৈনিক উৎসবের আলো
  3. info@www.voiceofnews.net : voiceofnews.net :
বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৮:১৪ অপরাহ্ন

বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর আবিষ্কার ক্ষুদ্রতম সোলারকপ্টার

ভয়েস অব নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশিত: রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪০ বার পড়া হয়েছে

কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের একদল বিজ্ঞানী গবেষণা চালিয়ে উদ্ভাবন করেছেন বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মাল্টিরোটর সোলার ড্রোন, যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মাত্র ১৫ সেন্টিমিটার বা প্রায় ছয় ইঞ্চি। ওজনেও সেটি অত্যন্ত হালকা, মাত্র ৭১ গ্রাম। ‘মাইক্রো সোলারকপ্টার’ নামে পরিচিত এ সিস্টেমটি সৌরশক্তির মাধ্যমে চার্জযোগ্য ব্যাটারির শক্তিতে চলবে। অসামান্য এ সাফল্যের মূলে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. হাসান শহীদ।

তাঁর নেতৃত্বেই হয়েছে এ গবেষণা। এর মধ্যেই উদ্ভাবনটি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বখ্যাত সোলার মিডিয়া প্ল্যাটফরম পিভি ম্যাগাজিন এবং নেচার গ্রুপের জার্নাল সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে।

বরিশালের বাকেরগঞ্জের হানুয়া গ্রামে তাঁর জন্ম। বাবা মো. ইসমাইল সিকদার শিক্ষক এবং মা সাঈয়েদুন নেছা গৃহিণী। হাসান শহীদের শিক্ষাজীবন শুরু হানুয়া মতিজান বিদ্যালয়ে। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ভর্তি হন বরিশাল ক্যাডেট কলেজে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই তিনি লক্ষ্য স্থির করেন, বিজ্ঞানী হবেন।

সেই স্মৃতিচারণা করে হাসান শহীদ বলেন, ‘ক্লাস সেভেনে বিজ্ঞানের ক্লাসে স্যাররা বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে মজার সব ঘটনা বলতেন। তখন অবচেতনভাবেই বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক বাড়ে। স্পষ্ট মনে আছে, ভবিষ্যতে কী হতে চাই? স্যারের এমন প্রশ্নে বলেছিলাম, বিজ্ঞানী হতে চাই। যদিও কোন বিষয়ে বিজ্ঞানী হতে চাই সেটা তখনো জানতাম না।’

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লায়েড ফিজিকস অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসে পড়ার সময় শিক্ষকদের মুখে শুনেছেন রোবটের গল্প, তাঁদের মধ্যে অনেকে রোবটিকসের ওপর বিদেশে পিএইচডিও করছেন।

তখনই জন্মে রোবটিকস গবেষণার ইচ্ছা। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে একই বিভাগে যেগ দেন শিক্ষক হিসেবে। এক বছরের বেশি সময় সেখানেই ছিলেন। কমনওয়েলথ স্কলারশিপ সূত্রে রোবটিকসে পিএইচডি গবেষণার জন্য ১৯৯৭ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটিতে। এর পর থেকে যুক্তরাজ্যেই আছেন। সেখানকার বিভিন্ন সংস্থা থেকে পেয়েছেন বেশ কিছু সম্মাননা। গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষকতায় অসাধারণ অবদানের জন্য পেয়েছেনে যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পুরস্কার ন্যাশনাল টিচিং ফেলোশিপ (এনটিএফ)। বাংলাদেশি একাডেমিশিয়ান হিসেবে তিনিই প্রথম এই পুরস্কার অর্জন করেন। এ ছাড়া উচ্চতর শিক্ষার উৎকর্ষতায় বিশেষ অবদান রেখে পান কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির ড্রেপার্স পুরস্কার ও ড্রেপার্স টিচিং ফেলোশিপ।

নিজের নতুন উদ্ভাবনটি সম্পর্কে বলেন, ‘ক্ষুদ্র ড্রোনটিতে যে সোলার সেল আছে, তা বড় সোলার সেলকে লেজার দিয়ে ছোট তিনটি অংশে কেটে তৈরি করতে হয়েছে। এ জন্য আপাতত এটি সাড়ে তিন মিনিটের বেশি উড়তে পারে না। সূর্যের আলো থেকে সোলার সেলের শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে। তখন বাড়বে ওড়ার সময়।’ বর্তমানে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এটি সূর্যের আলোতে চার্জ হতে সময় নেয় ৬৮ মিনিট। চার্জ শেষ হয়ে গেলেও ৩৮ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এই ড্রোন। সূর্যের আলো পেলেই ব্যাটারি চার্জ হয়ে ড্রোনটি ফের উড়তে পারবে।

ক্ষুদ্রাকৃতির হওয়ায় এটি কম উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। তৈরির খরচও কম। মাল্টিরোটর প্রযুক্তি ড্রোনটি অত্যন্ত সাবলীলভাবে উড়তে সক্ষম। ফলে ভারসাম্য ধরে রাখতে ড্রোনচালকের কষ্ট হবে না।

বড় ড্রোনের মতো এতেও আছে ক্যামেরা, তবে আকারে খুব ছোট। অন্যান্য ড্রোনের সব কাজই করতে পারে এটি। বিশেষত পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণে ভবিষ্যতে এটি বড় ভূমিকা রাখবে। যেহেতু সোলার এনার্জি দ্বারা এটি পরিচালিত হয় তাই এতে পরিবেশগত বড় ক্ষতি নেই।

ক্ষুুদ্র এই ড্রোনগুলো প্রয়োজনে দলগতভাবে কাজ করতে পারবে। এ বিষয়ে ড. হাসান শহীদ বলেন, ‘পিঁপড়া বা মৌমাছি যেভাবে দল বেঁধে কাজ করে একইভাবে এই ড্রোনগুলো মিলে দলবদ্ধভাবে বড় একটি এলাকা পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম।’ উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমি ব্রাজিল গিয়েছিলাম। সেখানে তাদের কৃষিজমিতে আমাদের দেশের মতো আইল থাকে না। ওরা কয়েক শ হেক্টর জমি বড় ট্রাক্টর দিয়ে একত্রে চাষাবাদ করে। এই বিশাল জমি পর্যবেক্ষণ করে কোথায় পানি বা সার লাগবে, কোথায় পোকা ধরেছে বা কোথায় গাছ মরে যাচ্ছে, তা জানা যাবে এই ড্রোনের মাধ্যমে। আমাদের দেশের পার্বত্য অঞ্চলে দেখবেন বর্ষাকালে ভূমিধস হয়। ড্রোনে সেন্সর থাকলে ভূমির ময়েশ্চার টেস্ট করে বলতে পারবে কখন ভূমিধসের শঙ্কা আছে। অনেক ড্রোন মিলে এ রকম বড় এলাকাও নজরে রাখা যাবে।’

ক্ষুদ্র মাল্টিরোটর সোলার ড্রোনের প্রযুক্তি আরো উন্নত হলে ভবিষ্যতে মহাশূন্যে স্যাটেলাইট হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। মহাকাশযানে বহন করে অন্য গ্রহে নিয়ে গেলে সেখানকার পরিবেশ নিরীক্ষণের কাজও করা যাবে, জানান এই বিজ্ঞানী।

এর আগে ২০১২ সালে তাঁর তত্ত্বাবধানেই উদ্ভাবন হয় বিশ্বের প্রথম শতভাগ সৌরশক্তিচালিত মাল্টিরোটর এয়ারক্রাফট, যেটি কোনো ব্যাটারির সহায়তা ছাড়াই উড়তে সক্ষম। সে সময়ই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। বলা যায়, এবার তিনি তৈরি করেছেন আগেরটির ক্ষুদ্র সংস্করণ।

ড. হাসান বলেন, তিনি রোবটিকস প্রযুক্তির ওপর নিজের গবেষণাগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশের গবেষকদের সঙ্গে যৌথ প্রজেক্টের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল, রয়াল সোসাইটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্স রিসার্চ কাউন্সিলে (ইপিআরসি) গ্র্যান্টের জন্য আবেদন করেছেন। এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ছাড়া যৌথ গবেষণার ক্ষেত্র তৈরির জন্য বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার রিসার্চ কাউন্সিলের গবেষকদের সঙ্গে কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে ওয়ার্কশপ আয়োজিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন আরো কিছু পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।

প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন ড. হাসান। তাঁর মতে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণায় আরো জোর দেওয়া উচিত। গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে প্রজেক্টভিত্তিক গবেষণায় অনুদান দেওয়া এবং তাতে নজরদারির ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেন। দেশি-বিদেশি গবেষকদের সম্মিলনে যৌথ গবেষণার ক্ষেত্র ও পরিবেশ তৈরির ওপরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট