বাংলা সাহিত্যের আকাশে হেলাল হাফিজ এক অনন্য নাম। ১৯৪৮ সালে নেত্রকোণার বড়তলী গ্রামে জন্ম নেওয়া এই কবি খুব অল্প বয়সেই মাকে হারান। জীবনের শোক-ব্যথা তাঁর সৃষ্টিতে গভীরভাবে প্রতিফলিত। ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তাঁর কবি জীবনের সূচনা।
১৯৬৯ সালে রচিত তাঁর প্রথম কবিতা ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে বিদ্রোহীদের প্রতীক হয়ে ওঠে। এ কবিতা লিখেই সে সময় পেয়ে যান তারকাখ্যাতি।
মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সমাজের বিকৃতি নিয়ে লেখা তাঁর কবিতা ‘প্রত্যাবর্তন’ একটি অনন্য উদাহরণ। এই কবিতায় যুদ্ধোত্তর সমাজের মানসিক পরিবর্তন এবং নেতৃত্বের বিভ্রান্তি নিয়ে তীব্র ব্যঙ্গ প্রকাশিত হয়েছে। পঙ্ক্তিগুলোতে তিনি লিখেছেন:
‘যুদ্ধোত্তর মানুষের মূল্যবোধ পাল্টায় তুমুল,
নেতা ভুল,
বাগানে নষ্ট ফুল।’
তাঁর ভাষা একাধারে তীক্ষ্ণ এবং মানবিক। তিনি প্রেমিক যেমন; তেমনই দ্রোহী। সমাজের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ ছিল সোচ্চার। একদিকে তাঁর কবিতায় প্রেমিকার জন্য আকুলতা, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। তিনি লিখেছেন: ‘নিউট্রন বোমা বোঝ, মানুষ বোঝ না।’
হেলাল হাফিজের কবিতা প্রেমের গভীরতায় ভরা। প্রেম তাঁর কবিতায় একদিকে যেমন বিশুদ্ধ, অন্যদিকে বিষাদমাখা। তাঁর বেদনার স্বর বিশেষভাবে স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রথম প্রেমিকাকে হারানোর পর। তবুও এই বেদনাকে তিনি নিজের সৃষ্টির উৎস করেছেন। তিনি বলেছেন: ‘মানুষ পোড়ালে কিছুই থাকে না, খাঁ খাঁ বিরান।
হেলাল হাফিজের কবিতার বিশেষ বৈশিষ্ট্য তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণশক্তি। তাঁর কবিতায় সমাজের অসঙ্গতি, রাজনীতির কূটচাল এবং জীবনের টানাপোড়েন উঠে এসেছে। তবে এসবের মধ্যেও তিনি মানুষের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখেন। তাঁর ভাষায়: ‘মানুষ আমাকে পোড়াতে পোড়াতে কবি করে তুলেছে।’