দেশের ৫৬ শতাংশ কৃষক ভূমিহীন হলেও অন্তর্বর্তী সরকার তাঁদের কথা ভাবছে না। অথচ এই গণ-অভ্যুত্থানে কৃষকের ছেলেমেয়েরা প্রাণ দিয়েছেন। তাঁরা রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাহলে কৃষকেরা প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছেন না কেন? কৃষি খাত সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হলো না কেন? এমন প্রশ্ন উঠেছে ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের কৃষক সম্মেলনে।
আজ রোববার রংপুর টাউন হলের সামনে ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের উদ্যোগে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আলোচকেরা অভিযোগ করেন, আলুর দাম না পাওয়ায় কৃষকদের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। খরচ বেশি হওয়ার জন্য হিমাগারে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো সরকারের অবহেলা ও একধরনের নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে হচ্ছে।
মোশাহিদা সুলতানা বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে কৃষকের ফসল নষ্ট হলে গেলে অথবা খরচ বেড়ে গেলে ক্ষতিপূরণ দিতে বিভিন্ন দেশের সরকার ন্যূনতম সহায়তা মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে এ রকম কোনো আইন নেই।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘পৃথিবীর দেশে দেশে কোনো বিপ্লব বা গণ-অভ্যুত্থানের পরে ভূস্বামী বা মহাজনের কাছ থেকে পুনর্বণ্টন করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা ভূমিহীনদের দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে কেন ভূমি সংস্কার বা কৃষি খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলো না?’
সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আহসানুল আরেফিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অজিত দাসের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য দেন রংপুরের ভাষাসৈনিক ও প্রবীণ রাজনীতিক মোহাম্মদ আফজাল, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, নারীমুক্তি কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিন, ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের রংপুর জেলার আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, গাইবান্ধার সভাপতি আহসানুল হাবীব, কিশোরগঞ্জ জেলার সংগঠক আলাল মিয়া, নীলফামারীর রফিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহের সংগঠক আবদুর রাজ্জাক, আলুচাষি সাইফুল ইসলাম, আখচাষি রবিউল ইসলাম প্রমুখ।
কৃষক সম্মেলন থেকে ১৮ দফা দাবি করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে আছে কৃষকদের ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত ও সিন্ডিকেট মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাবমুক্ত কৃষকদের অংশগ্রহণে রাষ্ট্রীয় বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা; সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ সব কৃষি উপকরণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বিএডিসিকে কার্যকর করা; রাষ্ট্রীয় সার কারখানা চালু ও বৃদ্ধি করা; ভেজাল, কালোবাজারি রোধ করা; কৃষিপ্রধান এলাকাগুলোতে কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে তোলা; বন্ধ চিনিকল, পাটকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু করা ইত্যাদি।