প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ৩, ২০২৫, ১:৫৫ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জানুয়ারী ২০, ২০২৫, ৫:৩২ এ.এম
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস যাত্রাবাড়ীতে নেই দালালের উৎপাত
আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের চাপ কমানোর জন্য ২০১০ সালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে একটি ভাড়া বাড়িতে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস যাত্রাবাড়ী নামে একটি অফিস চালু করা হয়। সেখানে ঘিঞ্জি পরিবেশে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের সময় উপযোগী সেবা দিতে পারেনি অফিসে কর্তব্যরত লোকজন। একটু বৃষ্টি হলেই অফিসের সামনের রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে যেত। নিত্যদিন অফিসে আসা-যাওয়ায় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো।
এসব সমস্যা এড়াতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ মোতাবেক পাসপোর্ট অফিসটি ২০১৭ সালে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের মনোরোম পরিবেশে ঢাকা-মাওয়া সংযোগ সড়কের পাশে ছয়তলা বিশিষ্ট একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। অফিসটির পঞ্চমতলায় প্রশাসনিক কাজ করা হয়। তৃতীয় তলায় পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের আবেদনপত্র সারিবদ্ধভাবে জমা নেওয়া হয়। এখানেই ম্যাসেজের মাধ্যমে আসলে তাদের ছবি তোলাসহ যাবতীয় কাজ করা হয়।
এই অফিসে নবাবগঞ্জ, দোহার, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শ্যামপুর, খিলগাঁও, সবুজবাগ, শাজাহানপুর, ওয়ারী, কোতোয়ালী ও সূত্রাপুর এই ১৩টি থানা এলাকার লোকজন পাসপোর্ট করাতে পারবেন। সরজমিনে রবিবার (১৯ জানুয়ারি) আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিস একেবারে সুনসান। নেই কোনো দালালদের উৎপাত। পাসপোর্ট অফিসের গেটের মধ্য মাইকিং করা হচ্ছে।
পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা কোনো দালালের মাধ্যমে আসবেন না। নিজের পাসপোর্ট নিজে করে নিন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে যেসব দালাল এখানে কাজ করতেন তারা আজ এখানে নাই। অফিসে কারা জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, পরিচালক স্যারের গেটের পাহারাদার নাইম। সে আবার অফিস সহকারী জুয়েলের মাধ্যমে কাজ করে থাকেন।
বাহিরে কারা কারা কাজ করেন জানতে চাইলে সে জানায়, ফয়সাল, রাসেল, রফিক, রায়হানসহ আট-দশজন কাজ করে। তবে আগের মতো না। তিনি আরো বলেন, বিগত সরকারের আমলে অফিসের ৮০% অফিসার জড়িত ছিল দালাল চক্রের সঙ্গে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরে কোনো অফিসারই দালালের সঙ্গে সক্ষ্যতা রাখছেন না তার কারণ হিসাবে সে জানায় চাকরি হারানোর ভয়ে।তিনি আরো জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগে আনোয়ারুল নামের এক আনসার ছিল। সে সকল অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। প্রতি মাসে সে লাখ লাখ টাকা দিতেন অফিসারদের। সে এখান থেকে বদলি হলেও মাঝে মধ্য আসে কাজ করানোর জন্য। এরপর পাসপোর্ট অফিসের মেইন ফটক দিয়ে ঢুকতেই একজন লোককে দেখা যাচ্ছে দাঁড়িয়ে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছেন। অফিসের নিচ তলায় গিয়ে দেখা য়ায় সারিবদ্ধ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে কিছু লোক। তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমরা পাসপোর্ট করতে দিয়েছি কিন্তু আমার কোনো ম্যাসেজ আসে নাই। তাই জানার জন্য এখানে লাইন ধরেছি।
এরপর ২য় ও ৩য় তলায় গিয়ে দেখা যায় কেউ লাইন দিয়েছে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য আবার কেউ বসে আছে ফিঙ্গার ও ছবি তোলার জন্য। সেখানে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে তারা বলেন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ হাউজিং এলাকায় থেকে আসা তাপস দাস বলেন, আমি বিদেশে যাব তাই পাসপোর্ট করতে এসেছি। আমার বড় ভাই পান্নু নামের এক দালালের মাধ্যমে কন্ট্রাক করেছে। সে লোক আজ আমাকে আবেদনের কাগজ ধরিয়ে দিয়েছে জমা দেওয়ার জন্য তাই লাইন ধরে বসে আছি। কত টাকা কন্ট্রাক করা হয়েছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এটা বড় ভাই জানে আমি জানি না।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত