বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতার কথা বলে গত তিন অর্থবছরে বিক্রি করা হয়েছে ৩১ বিলিয়ন ডলার। এতে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ তলানিতে নামে। উচ্চ সুদের বিদেশি ঋণ নিয়েও টাকার দর পতন ঠেকানো যায়নি। বরং ৮৪ টাকার ডলার এখন ১২৩ টাকায় উঠেছে।
বিদেশি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১০৪ বিলিয়ন ডলার। অথচ মেয়াদ পার হলেও অপরিশোধিত ছিল ৩ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। গত ৫ মাসে বিপুল অঙ্কের এ বকেয়া পরিশোধের পরও রিজার্ভ বেড়ে আবার ২১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন হয়েছে। মূলত কাগুজে কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে পাচার বন্ধে কঠোরতার কারণেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরের মধ্যে আগের সব বকেয়া পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৪০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। ডলার সংকটে এ বকেয়া পরিশোধ হয়নি তেমনটি নয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব আমদানিকারকের আসল সুবিধাভোগী পাওয়া যাচ্ছে না। কিংবা এমন উৎস থেকে আমদানি হয়েছে যা সন্দেহজনক। এই বকেয়া ঋণের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ এস আলম গ্রুপসহ এমন প্রতিষ্ঠানের যাদের মালিকরা পলাতক কিংবা জেলে আছেন। এসব কারণে বিদেশি সুবিধাভোগীর দায় শোধ করতে পারছে না ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা সমকালকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আগের সব বকেয়া পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ ছিল। বেশির ভাগ বকেয়া পরিশোধ হয়েছে। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের সময় যেখানে ৩৭০ কোটি ডলার মোট বকেয়া ছিল। সেখান থেকে ৩৩০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ৪০ কোটি ডলার পরিশোধ করা যাচ্ছে না কোনো না কোনো সমস্যার কারণে। বিপুল অঙ্কের বকেয়া পরিশোধের পরও রিজার্ভ বাড়ার বিষয়টি অত্যন্ত স্বস্তির খবর। শিগগির বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে আরও বেশ কিছু ডলার যোগ হবে। তখন রিজার্ভ আরও বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত সরকারের সময়ে কাগুজে কোম্পানির নামে বেনামি ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়। যে কারণে ডলারের ওপর ব্যাপক চাপ ছিল। এই চাপ মেটাতে বিভিন্ন উৎস থেকে উচ্চ সুদের বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের জুনে এটি ছিল ৮১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। গত জুন শেষে বেড়ে ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এখন যেনতেন ঋণ বন্ধ হয়েছে। কর ফাঁকি বন্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে কারণে রেমিট্যান্স ব্যাপকভাবে বাড়ছে। আগের সব রেকর্ড ভেঙে ২০২৪ সালে ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। আগের বছর রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৯২ কোটি ডলার। এ হিসেবে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪৯৭ কোটি ডলার বা ২২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। একক মাস হিসেবে গত ডিসেম্বরে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ২৬৪ কোটি ডলার এসেছে। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্সের রেকর্ড ছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রপ্তানিতে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত অর্থবছর যেখানে রপ্তানি আয় কমেছিল ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরেছে।